অনিকেতন

অচেনা জায়গায় একক-সংগ্রাম প্রথম দিকে কারাবাসের মত লাগত। কিন্তু যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের আসামীও জানে তার বন্দীদশার মেয়াদ। আমার ক্ষেত্রে সে অবধি অনির্দিষ্ট। তাছাড়া আসামী জানে কোন অপরাধে তার এই দন্ড। আমার জন্যে প্রবাস কোনও দন্ড নয়-- এ তো স্বেচ্ছা নির্বাসন। 
বিদেশে গিয়ে বাড়ীর জন্যে মন কেমন করা, এককথায় যাকে বলে হোমসিকনেস, এখন বোধহয় আর কারুর হয় না। আমার খুব হোতো। জানি, আবেগপ্রবণতা কৌলীন্য হারিয়েছে। আমরা যে সভ্য হচ্ছি। আমাদের ঘরের দেওয়ালে প্লাজমা টিভি, পার্সে ক্রেডিট কার্ড, পকেটে হাওয়াই যাত্রার টিকিট, কানে সেলফোন। এটা কি ব্যাকডেটেড সেন্টিমেন্ট আঁকড়ে থাকার সময়?
সবই বুঝি, কিন্তু মন মানে কই? আমি কিন্তু মোটেই ভাবুক প্রকৃতির নই। ভৌগলিক দেশকাল আমাকে খুব একটা প্রভাবিত করে না। যেকোনো জায়গায় সাদামাটা খাওয়া আর সাদাসিধে জীবন কাটিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারি। 
আজকের এই 'নিকট-দূরে'র দিনে ঘরছাড়া প্রবাসের তেমন কোন ব্যথা হয়তো আর নেই। কিন্তু দুই দশক আগেও ছবিটা একটু অন্য ছিল। আমার হোমসিকনেস একটু বেশীই দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। বারবার চোখ চলে যেতো ক্যালেন্ডারের পাতায়। ভুলতে চাইলেও দেখতাম যে ক'টা দিন বাড়ী ছেড়ে কাটিয়েছি তা বড়ই অল্প, পরের ছুটিটা অনেক দূরে!
প্রবাসকে আপন করে নেওয়া আর হল না। কখনো মনে হল না, বাড়ী-ঘর করে এখানেই বসে যাই। জীবনের এই গোধূলিবেলাতেও মনের কোনে যে ভাবনাটা মাঝেমধ্যে উঁকিঝুঁকি দেয় তা হল, সব হিসেবনিকেশ চুকিয়ে আমার ভাঙ্গা নৌকাখানা যদি আবার কোন কূল পায়, তা যেন হয় আমার বাল্যকালের খেলাঘর সেই বাংলার মাটিতে। এটা তো হোম-সিকনেসই, তাই না? 
রোগমুক্তি আজও হয়নি, ভুলে থাকাটা খানিক সড়গড় হয়ে এসেছে মাত্র।
সে যাক গে। কথা হল, চাকরি নিয়ে চলে তো এলাম। এবার একটা আস্তানার ব্যবস্থা করতে হয়। শুরুতে অফিসের গেস্ট-হাউসে উঠেছিলাম। সাতদিনের মাথায় এস্টেট অফিসার নোটিশ দিলেন, আর নয়। এবার নিজের বাসস্থান নিজেকেই ঠিক করতে হবে।
আমাদের অফিসেরই এক সিনিয়ার বাসাবদল করছিলেন। তিনি তাঁর খালি করা বাড়ীটি আমাকে পাইয়ে দিতে পারেন বলে জানালেন। ভদ্রলোকের অবিবাহিত কিন্তু বয়সে আমার চেয়ে বেশ কিছুটা বড়। বাড়ীটির পাকা ছাদ ছিল না আর প্ল্যানও খুব মনঃপুত হল না। কিন্তু অফিসের খুব কাছে এবং ভাড়াও সহনীয়। অগ্রজ অফিসার মহোদয় সে বাড়ীর ভূয়সী প্রশংসা করে বললেন, খুব সফিষ্টিকেটেড না হলেও বাড়ীতে আর কোনও ত্রুটি নেই এবং অত্যন্ত আরামপ্রদ। তাঁর মনে কোনও দুরভিসন্ধি ছিল বলে সন্দেহ হয়নি। আর আমার তখন শিরে সংক্রান্তি। তাই সিনিয়ার অফিসারের শংসাবাক্যে পেলাম সহায়তারই আশ্বাস। তাঁর সহৃদয়তা ধন্যবাদের সঙ্গেই গ্রহণ করলাম। পরদিনই বাড়ীওয়ালাকে দশমাসের অ্যাডভান্স দিয়ে চাবি আদায় করা গেল। পত্রপাঠ অফিসের গেস্ট হাউস ত্যাগ করলাম।
সে বাড়ীতে বাস করবার জন্য প্রবেশ করে কিন্তু বেশ দমে গেলাম। ঘরের মধ্যে বেশ স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। বহির্দ্বারের নীচে ফাঁক, রাতে আশপাশের ঝোপঝাড় থেকে কিছু প্রবেশ করা বিচিত্র নয়। তবু 'সস্তায় পাওয়া গেছে' এই বলে মনকে প্রবোধ দিয়ে মধ্যাহ্নভোজনের জন্যে প্রথমবার চাল-ডাল মিশিয়ে ষ্টোভে খিচুড়ি চাপালাম।
যতদূর মনে হয় সেদ্ধ হবার পর্যাপ্ত সময় দিয়েছিলেম। তবুও খেতে বসে দেখি চাল কাঁচা আছে। ষ্টোভের আগুণের কম উত্তাপ না জলের খরতা-- কে দায়ী তা জানি না। আবার করে সেই অর্ধপক্ক খিচুড়ি সেদ্ধ হতে দিলাম। এবার বেশ অনেকক্ষণ। নামাবার আগে দেখে নিলাম সেদ্ধ হয়েছে কিনা। 
সঙ্গে আর কোনও বাসন ছিল না। ঐ ডেকচিতেই বিনা চামচে ঘি-নুন দিয়ে চাল-ডাল সেদ্ধ গলাধঃকরণ করা গেল। পরিমাণের আন্দাজ ছিল না, 'রান্না' একজনের পক্ষে অনেক বেশী হয়ে গেছিল। কিন্তু শেষ রাখা চলবে না। পাত্র নেই। তাই পুরোটাই খেতে হল।
এবার সেই বাসন ধোবার পালা। তখন বেলা পড়ে এসেছে। দেখি কলে জল নেই। কী করি ভেবে না পেয়ে পাশের প্রতিবেশীর শরণাপন্ন হতে হল।
পল্লীটি খুব বর্ধিষ্ণু নয়। বাসিন্দারা খুব অবস্থাপন্ন বলে মনে হল না। প্রতিবেশিনী এক অল্পবয়সী গৃহবধূ। তাকেই আমার সমস্যা জানালাম। কিছু বুঝল কিনা জানি না, তার স্বামীকে ডেকে আনল। লোকটি শ্রমজীবী সম্প্রদায়ের, বোধহয় তখনই কাজ থেকে ফিরেছে। হিন্দি-ইংরেজী ভাষায় ও যথাসাধ্য অঙ্গভঙ্গিতে কর্ণাট দম্পতিটিকে আমার বাসনটা কীভাবে ধুতে পারি জিজ্ঞেস করলেম। আমার আকুতিতে দীনতা কিছু বেশীই প্রকট হয়েছিল মনে হয়। ফলশ্রুতিতে দেখলাম আমার কাজ তো হয়েই গেল। উপরন্তু পত্নী দ্বারা অনুরুদ্ধ হয়ে লোকটি আমাকে বুঝিয়ে দিল, আমি যেহেতু নতুন এসেছি, রাতে আর আমাকে রান্না করতে হবে না। তারা সানন্দে আমার নৈশ ভোজনের ব্যবস্থা করে দেবে।
এ আমার আশাতীত। দেখলাম কুণ্ঠিত হয়ে অযথা সৌজন্য প্রদর্শনের চেয়ে নির্লজ্জ ভাবে সে প্রস্তাবে সম্মত হওয়াটা সে অবস্থায় বেশী বুদ্ধিমানের কাজ। তখন সন্ধে হয়ে এসেছে। আমি রাজী হতেই সেই কৃষ্ণাঙ্গী দশনচ্ছটায় হর্ষজ্ঞাপন করে তখনই আমার সৎকারের জন্য অন্দরে চলে গেল।
তারপর যথাসময়ে আচার, একটি বিজাতীয় তরকারি ও মিষ্টান্ন সহযোগে গরম ভাত চলে এলো। এমনি সময়ে সে ব্যঞ্জন খুব রুচিকর হত মনে হয় না। অমৃত চেখে দেখা হয়নি, কিন্তু সে রাতে সেই সাদামাটা দক্ষিণী পাকান্নের স্বাদ অমৃতের কাছাকাছি ছিল বলেই আমার বিশ্বাস। 
সেই অপরিচিত দম্পতিকে অজস্র সাধুবাদ জানালাম। কিন্তু বউটি 'যেন এ কিছুই নয়' এই ভাবে থালা তুলে নিয়ে চলে গেল। যাবার আগে নিজের ভাষায় বলে গেল, আমার আর কিছু দরকার হলে যেন সংকোচ না করি। সত্যি বলছি, আমি যেন কৃতার্থ হয়ে গেলাম।
সে রাত্রে অভুক্ত থাকতে হয়নি, কিন্তু অনিদ্রা সঙ্গী হল। আলো নেভাতে সাহস হল না। বারবার দরজার নীচে দৃষ্টি চলে যাচ্ছিল। বাইরে কাছেই কিছু নিশাচর প্রাণীর উপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম। জন কোলাহল বিশেষ ছিলই না। ক্রমে রাত বাড়ার সঙ্গে তাও নিঃশব্দ হয়ে এলো। আর এমন নিশুতি রাতে যা হয়ে থাকে, নানান বিপদ ও প্রহেলিকার সম্ভাবনায় ঘুমের দফারফা হয়ে গেল। অবশেষে বহুবিধ বিচিত্র নৈশ শব্দে বিঘ্নিত কয়েক প্রহর কাটিয়ে ক্লান্তিতেই হয়ত শেষ রাতের দিকে ঘুম এসে গিয়েছিল। 
গৃহের প্রসাধনীটি একটু দূরে ও তার দরজায় অর্গল নেই। অশান্ত রাত্রিযাপনের পরে সেটি কোনমতে ব্যবহার করতে গিয়েই সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেললাম। এ বাড়ীতে আর রাত্রিবাস নয়। আজই এ বাড়ী ছেড়ে দিতে হবে। পাশের বাড়ীর গৃহস্বামিনীর অযাচিত ও নিঃস্বার্থ সেবা রসসিক্ত মনে স্মরণ করলাম। তারা হয়ত আবারও আমার সৎকারে পিছপা হত না, কিন্তু লজ্জার মাথা খেয়ে আবার তাদের দ্বারস্থ হতেও রুচিতে বাধল।
সেদিনই যশবন্তপুরে একটা মেস খুঁজে নিয়েছিলাম। বাড়ীওয়ালাকে আমার সিদ্ধান্ত জানাতে বিরসবদনে সে অগ্রিম রাশি ফেরত দিয়েছিল, কিন্তু পুরো একটি হাজার টাকা কেটে। এক রাতের ভাড়া এক হাজার টাকা! আমার সিনিয়ার অফিসারটিকে সে কথা বললাম। মধ্যস্থতা করবার পরিবর্তে হাবে ভাবে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, এতো ভালো(!) বাড়ী এইভাবে হাতছাড়া করা কিন্তু অবিবেচনার কাজ। তারপর থেকে তিনি আর আমাকে ঠিক চিনতে পারতেন না।  
আবার আমার বাড়ীর সন্ধান শুরু হয়ে গেল। প্রথমবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরে এবার রয়েসয়ে পা ফেলতে থাকি। হুট করে আর ডিসিশন নেওয়া নয়। রোজ অফিসের পরে বাড়ী খুঁজতে চলে যেতাম বিদ্যারণ্যপুরায়। জায়গাটা ভারি মনোরম লেগে গিয়েছিল। অবশেষে আস্তানাও গেড়েছিলাম সেই বিদ্যারণ্যপুরায়। সে তখন প্রায় গ্রাম বললেই চলে। মল্লেশ্বরমের ভীড়ভাড় থেকে প্রায় দশ কিলোমিটারের দূরত্বে। মাঝে বেশ খানিকটা ফাঁকা রাস্তা। মনে হোতো যেন শহরের বাইরে এসে গেছি। 
অফিসে বেশ কয়েকজন বাঙালী সহকর্মী পাওয়া গেল। আমার বসও ছিলেন সেনগুপ্তদা, বেশ মাইডিয়ার লোক। ধীরাজ মাইতি ও প্রণব দাস ছিল প্রচণ্ড ফচকে। প্রায় আমারই সমপর্যায়ের, অবশ্য অন্য বিভাগে। নিয়মিত পেছনে লাগা হত রজনীদার সঙ্গে। সেন্ট্রাল ষ্টোরের রজনীকান্ত বোস।
আসলে বোসদা সেরকম মিশুকে ছিলেন না। কেন জানি না, তাঁর বাড়ীতে কেউ এলে অস্বস্তি ভোগ করতেন। থাকতেন সেই বিদ্যারণ্যপুরাতেই। মাইতির তাতে বেশ সুবিধে হল। আমার বাড়ী খুঁজতে যাওয়ার ছুতোয় প্রায়ই বলবে, চলুন বাড়ী দেখা হয়ে গেলে বোসদার বাড়ী গিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে। বোসদা সন্ত্রস্ত হয়ে উঠতেন। পারতপক্ষে অফিসের পরে আমাদের সাথে ফিরতেন না। 
একদিন ঘটনাচক্রে একই বাসে উঠতে হয়েছে। মাইতির মুখে ফিচেল হাসি দেখে বলেই ফেললেন, তোমরা সত্যিই আমার বাড়ী আসছো নাকি! বোসদার সেই আশঙ্কিত মুখমন্ডল এখনও মনে আছে। 
আর একবার আমি একলাই বাড়ী খুঁজতে বেরিয়েছি। একটা বাড়ী বেশ ভালো লেগেছিল। বেশ ছিমছাম ছোট্ট বাগানঘেরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট হাউস। বাড়ীওয়ালার সঙ্গে কথা বলতে গেলাম। বাড়ীর মালিক সব দেখিয়ে-টেখিয়ে একটু যেন ইতস্তত করছেন মনে হল। কথোপকথন ইংরেজিতেই হচ্ছিল, বাংলা করলে এইরকম দাঁড়ায়—
—জানেন নিশ্চই কান্নাডিগারা খুব রক্ষণশীল। বাড়ীওয়ালা ভদ্রলোক বললেন, অবশ্য আমরা খুব লিবার‍্যাল। তা আপনারা তো নিশ্চই মাছ খান?
—আজ্ঞে হ্যাঁ। তা—
—আমরা কিন্তু পিওর ভেজিটেরিয়ান।
—ও। তা আপনার বাড়ীতে টেন্যান্টরা—
—আগে যারা ছিল তারা এখানকারই, ভেজিটেরিয়ান। কিন্তু আপনি তো আবার কলকাতার লোক—
—কিন্তু আপনারা তো এখানে থাকেন না। খুব অসুবিধে হবে কি?
—না না, আমাদের কোনও অসুবিধে নেই। তবে কি জানেন, প্রতিবেশীরা কেউ কেউ কমপ্লেন করতে পারে। বুঝতেই পারছেন, সবাই তো আর আমাদের মত লিবার‍্যাল নয়— হে হে—
আমি যা বোঝার বুঝে গেলাম। প্রতিবেশীদের নয়, আপত্তিটা ওনারই। এখানে থাকতে গেলে মাছ খাওয়া চলবে না। একটু দমে গেলাম। কিন্তু ভাড়ার অঙ্কটা শুনে অবশ্য আর দুঃখ করার কিছু রইল না। সে বাড়ী আর নিতে হয় নি।
দিন কাটছে। একদিন একরকম উদাস হয়েই বাড়ীর সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে একটা বেশ বড়সড় দোতলা বাড়ীর সামনে 'টু লেট' বোর্ড দেখে কলিং বেল টিপলাম। এক ভদ্রমহিলা দরজা খুলে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে আমাকে অবলোকন করতে লাগলেন। আমি ইংরেজিতে আমার প্রয়োজন বললাম। মহিলা ওনার ভাষায় কিছু বললেন, বোঝা গেল না। আমার অসহায় অবস্থা দেখে তিনি অতঃপর কম্পাউন্ডের ধারে গিয়ে 'মুরলী মুরলী' বলে কারুকে ডাকলেন। মুরলীধর এলো, দেখলাম প্রায় আমারই বয়সী রোগাপাতলা কিন্তু চড়কচাঙ্গা একটি ছেলে। মহিলা ও আমার মাঝে সে দোভাষীর কাজ করে দিল।
সে বাড়ীও দরে পোষায় নি, কিন্তু আমি যা লাভ করলাম তার নাম মুরলী। এক অসমবন্ধুত্বের সেই শুরু। আমাদের ভাষা আলাদা, আমাদের সংস্কার আলাদা, আমাদের রাজ্য আলাদা, আমাদের খাওয়া-দাওয়া আলাদা। এক সম্পূর্ণ অপরিচিত ভিনদেশীকে সে যে সৌহার্দে আপন করে নিয়েছিল, তা ভাবলে আজও অবাক হই। মুরলী আমাকে বাইকের পিছনে বসিয়ে বাড়ী খুঁজতে সাহায্য করেছে, ভাষার সমস্যা দূর করেছে, সেদেশের আদব-কায়দা শিখিয়েছে, সাবধান করে দিয়েছে, সম্ভাব্য বাড়ীওয়ালার কাছে মাছ-খাওয়ার কথা যেন না বলি!
মুরলী আজও আমার বন্ধু। ওই আমাকে বাড়ী খুঁজে দিয়ে ব্যাঙ্গালোরে স্থাপিত করে দিল। রসিকতা করে একদিন বলল, যাও, এবার গিয়ে ভাবীকে নিয়ে এসো।
আমি বেজায় লজ্জা পেয়ে বললুম, ধ্যাৎ--।

Comments

Popular Posts